এম. বেদারুল আলম::
সরকারের একমাত্র টেলি কমিনিউকেশন কোম্পানি (বিটিসিএল) নানা সুযোগ সুবিধার পসরা নিয়ে মাঠে থাকলেও প্রচারণার অভাবে গ্রাহকরা সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সাথে পাল্লা দিতে মাঠে থাকা অন্যান্য টেলি কমিউনিকেশন কোম্পানির চেয়ে বিটিসিএল সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করলেও প্রতিষ্ঠানটি তার কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না শুধুমাত্র প্রচারণার অভাবে। সরকারের প্রদত্ত গুরুত্বপূর্ণ অফারগুলো না জানার কারণে পিছিয়ে পড়ছে বিটিসিএল।
ডাক যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি বিটিসিএল বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মাঠে নেমেছে নতুন করে। দেশের চলমান চারটি মোবাইল কোম্পানির চেয়ে সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে অত্যন্ত সুলভ মূল্যে গ্রাহকদেরকে ইন্টারনেট সুবিধা এবং কল রেট কমিয়েছে। ইন্টারনেট সুবিধায় গতি বৃদ্ধি করে গ্রাহকদের জন্য দাম কমিয়ে “জিপন” নামের গুরুত্বপূর্ণ প্যাকেজ চালু করেছে। ২০০৭ সাল থেকে সরকারের এ প্রতিষ্ঠানের ল্যান্ড ফোন গ্রাহকের সংখ্যা কমে যাওয়ায় এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন বিটিসিএলের কক্সবাজারস্থ সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইনুর রশিদ। ইন্টারনেটের দাম কমায় এবং কলরেট নামে মাত্র করার কারণে জেলায় দিন দিন বিটিসিএল এর গ্রাহক বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। কক্সবাজারের যে সমস্ত ল্যান্ড ফোন গ্রাহক রয়েছে তারা নামমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট সেবা এবং কল রেট ফ্রি টেলিটক টু টেলিটকে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন বলে তিনি জানান। ইতিমধ্যে কক্সবাজারের ৩০০০ গ্রাহক এই সুযোগ গ্রহণ করেছেন বলে তিনি দাবি করেন।
বিটিসিএল কক্সবাজারের সহকারী মোহাম্মদ হোসেন রশিদ দৈনিক কক্সবাজারকে জানান – দেশের প্রাইভেট কোম্পানির চেয়ে সরকারি বিটিিসিএল এর ইন্টারনেট সেবা দ্রুত। এর গতি বেশি হওয়ার কারণে এবং কম দামে সহজেই সেবা পৌঁছে দেওয়ার ফলে কয়েক মাসের মধ্যেই কক্সবাজারে গ্রাহক সংখ্যা ৩ হাজারে পৌঁছেছে। ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ২০২১ সালে “জিপন” নামের একটি অ্যাপ চালু করেন। প্রথম দিকে প্রচারণার অভাবে গ্রাহকের সাড়া না থাকলেও কয়েক বছরের মধ্যে এর গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুধুমাত্র কক্সবাজারে জিপন গ্রাহকের সংখ্যা রয়েছে ৩০০০ জন। এছাড়া জেলার সব সরকারি অফিস আদালত বড় বড় প্রতিষ্ঠানসমূহ জিপন থাকায় তারাও এই সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে। জিপন সংযোগের মাধ্যমে সরকারের আন্তঃ দপ্তরের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। সরকারের বাহিনী গুলো এবং গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর গুলো ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছে জিপন সার্ভিসের মাধ্যমে।
# জিপন সুবিধায় ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধি
# টিএন্ডটি থেকে টিএন্ডটিতে কলরেট শূন্য
# বড় সব দপ্তরে কমদামে ব্রডব্যান্ড সুবিধা
# গতি এসেছে ৮ উপজেলায়
# প্রচারণা জোরদার জরুরি
প্রচারণার অভাবে ল্যান্ড ফোন গ্রাহকরা এতদিন উক্ত সেবা থেকে বঞ্চিত থাকলেও সম্প্রতি কক্সবাজারে ৩০০০ ল্যান্ডফোন গ্রাহক জিপন সেবার আওতায় এসেছে বলে এই কর্মকর্তা দাবি করেন। দেশের অপরাপর মোবাইল অপারেটর গুলো যেখানে ৫ এমবিপিএস ইন্টারনেট ৮শ থেকে ১ হাজার টাকা দাম নিলেও বিটিসিএল নিচ্ছে মাত্র ৫০০ টাকা। বেসরকারি মোবাইল অপারেটর গুলো ইন্টারনেট ডাউন হলেও গতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকেনা বিটিিসিএল এর ইন্টারনেট সেবায়। দ্রুতগতির হওয়ায় এবং খুব সহজেই ২৪ ঘন্টা উন্মুক্ত সেবা দেওয়ার কারণে এর গ্রাহক বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে জানা গেছে।
বিটিসিএলের জিপন সংযোগের গ্রাহক সদর উপজেলা পরিষদে পেছনে দক্ষিণ ডিককুলের আবু ফাহাদ জানান- সরকারি বিটিসিএলের জিপন সেবার মাধ্যমে আমরা ২৬ জন ইন্টারনেট ব্যবহার করে সুবিধা পাচ্ছি। ১০ এমবিপিএস নিয়ে বন্ধন এসোসিয়েশন নাম দিয়ে দ্রুত গতির নেট সেবা পেয়েছি। ফলে আমাদের অনলাইন ও দৈনন্দিন কাজ খুব সহজে করতে পারছি। আগে আমরা যে অপারেটর সংযোগ কিনেছিলাম তা খুবই দূর্বল। সরকারি সেবা কম টাকায় ভালো ইন্টারনেট পেয়েছি যেটি অনেকেই জানেনা। বিটিসিএলের সরকারি সুবিধা জানাতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আরো ভুমিকা রাখা উচিত বলে মনে করেন এ গ্রাহক।
বিটিসিএল কক্সবাজার অফিস সূত্রে জানা যায় – ১৯৫৮ সালে কক্সবাজারে প্রথম টিএন্ডটি সেবা চালু হয়। বর্তমানে পুরো জেলায় বিটিসিএল এর কাজ চলমান রয়েছে। কুতুবদিয়া উপজেলায় সম্প্রতি বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার কারণে বিটিসিএলও তাদের ইন্টারনেট সেবা চালু করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। যারা বিটিসিএল এর ল্যান্ডফোন সেবা গ্রহন রয়েছে তারা খুব সহজেই জিপন নেট সংযোগ ব্যবহার করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট প্রযুক্তি ল্যান্ড ফোনের সাথে সংযুক্ত করতে পারবে। কক্সবাজারে ২০১২ সালে টিএন্ডটির গ্রাহক সংখ্যা ২৫০০ জন ছিল। ইন্টারনেট সেবা না থাকায় ২০২০ সালে এসে গ্রাহক সংখ্যা কমে ২০০০ এ দাঁড়ায়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে সরকার জিপন ইন্টারনেট চালুর কারণে কক্সবাজারে গ্রাহকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।বর্তমানে টিএন্ডটির ল্যান্ডফোন এবং সাথে ইন্টারনেট ব্যবহার করে গ্রাহক সংখ্যা ৩ হাজার উন্নীত হয়েছে। সরকারের এই টেলিসেবা কোম্পানিটি ভূগর্ভস্থ অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে গ্রাহককে সংযোগ দেওয়ায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে ইন্টারনেট সরবরাহ ও কলরেট সেবার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। টিএন্ডটি থেকে টিএন্ডটিতে কথা বলার জন্য গ্রাহকদের কোন টাকা ব্যয় করতে হয় না এবং টিএন্ডটি থাকলে সহজেই জিপনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ সহজিকরণে এর গ্রহণযোগ্যতাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে মনে করেন কক্সবাজারের সহকারী প্রকৌশলী। টিএন্ডটি থেকে যেকোনো টিএন্ডটিতে মোবাইলে কথা বলার কস্ট জিরো করা হয়েছে। গ্রাহকরা মাত্র ৫২ পয়সা খরচ করে টিএন্ডটি থেকে যেকোনো বেসরকারি মোবাইলে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। ২০২১ সালের মার্চে টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির আধুনিকায়ন শীর্ষক প্রকল্প আধুনিক প্রযুক্তির ‘জিপন’ কক্সবাজারে চালু হলে ও এতদিন প্রচারণার অভাবে গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। তবে সম্প্রতি টিএন্ডটি থেকে টিএন্ডটি তে কল ফ্রি এবং মাত্র ৫০০ টাকায় ৫ এমবিপিএস ইন্টারনেট পাওয়ার সংবাদসহ কম দামে বিভিন্ন প্যাকেজ চালুর সংবাদ গ্রাহকের কাছে ছড়িয়ে পড়লে গ্রাহকরাই মূলত গ্রাহক টানছে। দেশের অন্যান্য বিটিসিএল অফিসের চেয়ে কক্সবাজারে ক্রমবর্ধমান হারে গ্রাহক বাড়ছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
বিটিসিএল কক্সবাজার অফিস সূত্রে জানা যায় – বেসরকারি অপারেটর এর সাথে পাল্লা দিতে সরকার বিটিসিএল অফিসগুলোতে জনবল বৃদ্ধি করছে। কক্সবাজার অফিসে ২৫ জনের জনবল পদে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৮ জন। এর মধ্যে নতুন করে আউটসোর্সিং থেকে যুক্ত হয়েছে ৯ জন। ফলে গ্রাহকদের সুযোগ সুবিধা ও সেবার মান আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে বলে গ্রাহকরা জানান। মাত্র ১৫০ টাকায় টেলিফোন সংযোগ এবং জীপন সেবার মাধ্যমে টেলিফোন ও ইন্টারনেট সার্ভিস চলছে বিটিসিএল অফিসে। যে সকল গ্রাহক ১০ এমবিপিএস এর চেয়ে বড় ব্যান্ডউইথ প্যাকেজ গ্রহণ করে তাদের একটি করে বিনা পয়সায় রাউটার প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইনুর রশিদ।
পাঠকের মতামত